পিত্তথলিতে পাথর এড়াতে বাদ দিতে হবে যে ৬ টি খাবার

পিত্তথলিতে পাথর (Gallstones) হওয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সাধারণত পিত্তথলিতে কঠিন পদার্থ জমা হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়। এই পাথরগুলি ছোট থেকে বড় আকারে হতে পারে এবং পিত্তথলি বা পিত্তনালীতে আটকে গিয়ে মারাত্মক ব্যথা বা সংক্রমণের কারণ হতে পারে। যদিও পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা নেই, কিছু খাবার এটি তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এখানে ৬টি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো নিয়মিত খেলে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে, এবং কীভাবে এই সমস্যাটি প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে।

১. চর্বিযুক্ত বা তেলেভাজা খাবার

চর্বিযুক্ত বা উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার, যেমন ফ্রাইড ফুডস (তেলেভাজা খাবার), বার্গার, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি পিত্তথলিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়। চর্বিযুক্ত খাবার খেলে শরীরে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল তৈরি হয়, যা পিত্তের মধ্যে জমে পাথরের আকার ধারণ করতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়: ফাস্ট ফুড এবং তেলেভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যেমন অ্যাভোকাডো, বাদাম, এবং অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।

২. প্রসেসড খাবার

প্রসেসড খাবার, যেমন প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, পিজ্জা, পাস্তা এবং প্রক্রিয়াজাত মাংসগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাট, সংরক্ষক এবং প্রক্রিয়াজাত চিনি থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক এবং পিত্তথলিতে পাথর তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়: বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। যতটা সম্ভব তাজা সবজি ও ফলের উপর জোর দিন।

৩. লাল মাংস

লাল মাংসে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল থাকে, যা নিয়মিত খেলে পিত্তের মধ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে পাথর তৈরি করতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়: লাল মাংসের বদলে চিকেন, মাছ, অথবা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন (যেমন লেন্টিলস, চানা) বেছে নিন। লাল মাংস একেবারে খেতে হলে, সেটি খুবই সীমিত পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৪. উচ্চ শর্করা এবং চিনিযুক্ত খাবার

উচ্চ শর্করা বা মিষ্টি জাতীয় খাবার, যেমন কেক, পেস্ট্রি, মিষ্টি পানীয়, ক্যান্ডি ইত্যাদি পিত্তথলির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। অতিরিক্ত চিনি শরীরে ফ্যাট তৈরি করে এবং পিত্তের মধ্যে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রতিরোধের উপায়: চিনিযুক্ত পানীয় এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন। প্রাকৃতিক চিনি, যেমন ফলমূলের উপর নির্ভর করুন এবং চিনির বিকল্প ব্যবহার করতে পারেন।

৫. উচ্চ পরিমাণে রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট

রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট যেমন সাদা রুটি, সাদা চাল, পাস্তা এবং রিফাইন্ড সিরিয়াল দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, যা শরীরে কোলেস্টেরল তৈরি করে এবং পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

প্রতিরোধের উপায়: রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেটের বদলে সম্পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার (হোল গ্রেইনস) যেমন ব্রাউন রাইস, হোল গ্রেইন রুটি, এবং ওটস বেছে নিন।

৬. অতিরিক্ত ডেইরি প্রোডাক্টস (চর্বিযুক্ত দুধ, মাখন, পনির)

চর্বিযুক্ত দুধ, মাখন এবং পনিরের মতো ডেইরি প্রোডাক্টস শরীরে উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ফ্যাট যোগ করে, যা পিত্তথলিতে পাথর তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এই ধরনের খাবারগুলো কোলেস্টেরলযুক্ত পিত্তপাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রতিরোধের উপায়: কম চর্বিযুক্ত বা চর্বিমুক্ত দুধ, পনির এবং মাখনের বিকল্প ব্যবহার করুন। যেমন: স্কিমড মিল্ক, লো-ফ্যাট দই, এবং অলিভ অয়েল বা মাখনের বদলে ঘি ব্যবহার করা যেতে পারে।

ক. পিত্তথলিতে পাথর প্রতিরোধের উপায়

১. সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন: খাদ্যতালিকায় তাজা ফল, শাকসবজি, সম্পূর্ণ শস্য এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যোগ করুন।

২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি। ওজন হ্রাসের জন্য কঠোর ডায়েট বা দ্রুত ওজন কমানোর প্রচেষ্টা করা উচিত নয়, কারণ এটি পিত্তপাথর তৈরিতে অবদান রাখতে পারে।

৪. জলপান করুন: পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে এবং পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

৫. ছোট ছোট খাবার খান: একবারে অনেক বেশি খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। ছোট ছোট খাবার গ্রহণ করলে শরীরের হজম প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কাজ করে এবং পিত্তথলিতে পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি কমে।

৬. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার পূর্বাভাস থাকে বা পূর্বে সমস্যা হয়ে থাকে, তবে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

খ. উপসংহার

পিত্তথলিতে পাথর হওয়া একটি বিরক্তিকর এবং কষ্টদায়ক অবস্থা, তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। উপরোক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চললে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে পিত্তথলির স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।

(ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ)

নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
আপনার তথ্য কোন তৃতীয় পক্ষকে প্রদান করা হবে না।
সাবস্কাইব করুন!
Get 50% OFF
Join our newsletter and get 50% off your next purchase and be the first to get notified on new products and deals
Privacy Policy. This information will never be shared for third part.
Subscribe Now!