আখরোট খাওয়ার উপকারিতা, ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে

আখরোট, যা ইংরেজিতে “Walnut” নামে পরিচিত, একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর বাদাম হিসেবে বিবেচিত। এটি শরীরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা প্রদান করে, যা সাধারণ স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকর। আখরোট খাওয়া শুধু স্বাদে নয়, বরং পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। আখরোটের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

আজকের ব্লগে আমরা আখরোটের উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, সেই সাথে এটি কীভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

১. আখরোটের পুষ্টিগুণ

আখরোটের পুষ্টিমূল্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং এর প্রায় প্রতিটি উপাদানই শরীরের জন্য উপকারী। ১০০ গ্রাম আখরোটের মধ্যে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদানগুলো পাওয়া যায়:

  • ক্যালোরি: ৬৫৪ ক্যালোরি
  • প্রোটিন: ১৫.২৩ গ্রাম
  • ফ্যাট: ৬৫.২১ গ্রাম (মুখ্যত স্বাস্থ্যকর ফ্যাট)
  • কার্বোহাইড্রেট: ১৩.৭১ গ্রাম
  • ফাইবার: ৬.৭ গ্রাম
  • ভিটামিন ই: ০.৭ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম: ১৫৮ মিলিগ্রাম
  • ফোলেট: ৯৮ মাইক্রোগ্রাম

এই পুষ্টি উপাদানগুলো আখরোটকে একটি প্রাকৃতিক সুপারফুডে রূপান্তরিত করেছে। চলুন এবার আখরোট খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

২. আখরোট খাওয়ার উপকারিতা

ক. হৃদযন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

আখরোটে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গবেষণা অনুযায়ী, আখরোট রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এছাড়াও, আখরোট রক্তের ক্ষতিকর ফ্যাট যেমন LDL কোলেস্টেরল কমায় এবং উপকারী ফ্যাট HDL কোলেস্টেরল বাড়ায়। ফলে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে এবং হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

খ. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

আখরোটের উচ্চ ফাইবার উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়, ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়। নিয়মিত আখরোট খাওয়া রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।

গ. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়

আখরোটের আকার মস্তিষ্কের মতোই, এবং এটি মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আখরোটে থাকা ওমেগা-৩ এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ মস্তিষ্কের কোষগুলিকে সুরক্ষিত করে এবং স্নায়ু কার্যকারিতা বাড়ায়। নিয়মিত আখরোট খাওয়া স্মৃতিশক্তি উন্নত করে, মনোযোগ বাড়ায় এবং বৃদ্ধ বয়সে আলঝাইমার বা ডিমেনশিয়া রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে।

ঘ. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

যদিও আখরোটে ক্যালোরি এবং ফ্যাটের মাত্রা বেশি, তবুও এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। আখরোটে থাকা ফাইবার এবং প্রোটিন তৃপ্তির অনুভূতি জাগিয়ে তোলে এবং ক্ষুধা কমিয়ে দেয়, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। ফলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি কমে যায় এবং শরীর সুস্থ থাকে।

ঙ. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধ করে

আখরোটে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করতে সহায়ক। ফ্রি র্যাডিক্যালের কারণে শরীরের কোষগুলো দ্রুত বার্ধক্যের দিকে চলে যায়। আখরোটের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও কোমল রাখতে সহায়তা করে।

চ. হাড়ের জন্য উপকারী

আখরোটে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা হাড়ের গঠন এবং মজবুত রাখতে সহায়ক। এছাড়া, এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের সমস্যা কম হয়।

৩. আখরোট এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ

আখরোটের অন্যতম প্রধান উপকারিতা হলো এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে আখরোটে উপস্থিত ফাইটো কেমিক্যাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগগুলো শরীরে ক্যান্সারের কোষ গঠন ও বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসে আখরোট বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ক. স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে আখরোট

আখরোটের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনল যৌগগুলি স্তন ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আখরোট খাওয়া মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।

খ. প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে আখরোট

আখরোটের মধ্যে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইটো কেমিক্যাল যৌগ প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিকে ধীর করে দেয় এবং এর বিস্তার রোধ করে। পুরুষদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার হিসেবে বিবেচিত।

গ. কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে আখরোট

কোলন বা বৃহদান্ত্র ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও আখরোট বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আখরোটের ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো বৃহদান্ত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক হয়।

৪. আখরোটের সঠিক ব্যবহার এবং প্রতিদিনের ডোজ

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আখরোট যুক্ত করা খুবই সহজ। এটি স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন, সালাদে মিশিয়ে খেতে পারেন, বা বিভিন্ন ধরনের ডেজার্ট এবং খাবারে যোগ করতে পারেন।

সঠিক ডোজ:

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন ১-২ আউন্স (প্রায় ২৮-৫৬ গ্রাম) আখরোট খাওয়ার পরামর্শ দেন। এটি সাধারণত ৭-১০টি আখরোটের সমান।

৫. আখরোট খাওয়ার কিছু সতর্কতা

যদিও আখরোট অত্যন্ত পুষ্টিকর, তবে অতিরিক্ত আখরোট খাওয়া কিছু সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন:

  • অতিরিক্ত ওজন বাড়াতে পারে: আখরোটে উচ্চমাত্রায় ক্যালোরি থাকায় অতিরিক্ত খাওয়া হলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
  • অ্যালার্জি: কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আখরোটে অ্যালার্জি হতে পারে, যা ত্বকের সমস্যা বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। তাই যারা বাদামের অ্যালার্জিতে ভোগেন, তাদের আখরোট খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

৬. উপসংহার

আখরোট হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক সুপারফুড, যা শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। এটি হৃদরোগ থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস, বার্ধক্য এবং ক্যান্সার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আখরোট যোগ করলে আপনি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে পারবেন।

৭. সাধারণ জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

১. আখরোট প্রতিদিন খাওয়া কি নিরাপদ?

হ্যাঁ, প্রতিদিন আখরোট খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী। তবে, প্রায় ৭-১০টি আখরোট (১-২ আউন্স) খাওয়া যথেষ্ট। অতিরিক্ত খেলে উচ্চ ক্যালোরি ও ফ্যাটের কারণে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।

২. আখরোট কি ওজন বাড়ায়?

আখরোটে ফ্যাট এবং ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকলেও এটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। তবে অতিরিক্ত আখরোট খেলে ওজন বাড়তে পারে, তাই নির্দিষ্ট মাত্রায় খাওয়াই ভালো।

৩. আখরোট কি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে?

হ্যাঁ, আখরোটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটো কেমিক্যাল যৌগগুলো ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করে। এটি বিশেষত স্তন, প্রোস্টেট এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

৪. আখরোট কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী?

হ্যাঁ, আখরোটের ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।

৫. আখরোটের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?

যদি আপনি আখরোট বা অন্য বাদামের অ্যালার্জিতে ভুগে থাকেন, তাহলে আখরোট খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া, অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধি এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে।

(ফলো করুন আমাদের Faceboo পেজ)

নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন
আপনার তথ্য কোন তৃতীয় পক্ষকে প্রদান করা হবে না।
সাবস্কাইব করুন!
Get 50% OFF
Join our newsletter and get 50% off your next purchase and be the first to get notified on new products and deals
Privacy Policy. This information will never be shared for third part.
Subscribe Now!